শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo
বাজার মনিটরিংয়ের তাগিদ ব্যবসায়ীদের

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ক্রেতারা

প্রকাশিত - ১২ আগস্ট, ২০২৪   ০৯:৩৭ পিএম
webnews24

আরাফাত দাড়িয়া : নতুন সরকার গঠনের পর থেকে বাজার পরিস্থিতির লাগাম কিছুটা টানতে শুরু করেছে। কয়েকটি জায়গায় দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি; আবার কয়েক স্থানে তুলনামূলক স্থিতিশীল। তবে ক্রেতারা পণ্যমূল্য হাতের নাগালে ফিরে পেতে চান। জনজীবনে স্বস্তি  নিশ্চিত করতে এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
সরকারের পতনের পর রবিবার থেকে বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে দাম কমার খবর দিয়েছেÑ তার প্রতিফলন বাজারে দেখা যায়নি। গতকাল সোমবার সরেজমিন কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। মোহাম্মদপুরের কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছ, মুরগী থেকে শুরু করে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। ফলে ক্রেতারা বাজার করতে এসে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। ব্রয়লার মুরগী, মাছের দাম কমেছে।’ নুরজাহান বেগম নামের এক গৃহীনিও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন, ‘আমি কয়েক পদের মাছ কিনলাম, দেখি এক সপ্তাহের আগের চেয়ে অনেক দাম কম। মনে হচ্ছে, আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগে ব্রয়লার মুরগীর দাম ছিলো ২০০ থেকে ২২০ টাকা, সেটি কাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। ছোট কই মাছ আগে ছিলো ২৪০ টাকা আর বড় কই ২৮০ টাকা, কাল সেগুলো বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১৬০ ও ১৮০ টাকায়। সবজির দামও কমতে শুরু করেছে। পেঁপে ৪০, শশা ৮০, টমেটো ১২০, আলু, ৫০, পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের ডজনও কমে দাঁড়িয়েছে ১৪০ টাকায়। তবে এসব পণ্যের দাম আরো কমবে বলে জানালেন বিক্রেতারা। 
এ প্রসংগে ঢাকা উদ্যানের এক সবজি বিক্রেতা ফারুক আলম বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের কম দামে বিক্রি করায় তারাও খুশি হচ্ছেন। চড়া দামে বিক্রি করলে কে খুশি হয় বলেন। আর আমাদেরই বা কি করার, আমাদের যখন কিনতে হয় বেশি দামে তখন তো কিছু লাভ রেখে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আমরা তো নিরুপায়।’ যদি এখন পণ্যের মূল্য কমে বিক্রি করা যায় আগে কেন হয়নি এর উত্তরে মাছ বিক্রেতা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘একটা সিন্ডিকেট ছিলো যারা কোনভাবেই দাম কমাতো না। তাছাড়া পন্যবাহী বাহনগুলোকে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা দিতে হতো। এখন তো সেই চাঁদা নেই তাই দাম কমতে শুরু করেছে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় পন্যবাহী বাহনগুলো ঢাকায় ঢুকতে পারেনি তাই তখনো একটু দাম চড়া ছিলো, তবে বর্তমান দামও অনেক কমবে আরো কিছুদিন পর।’ 
পণ্যের দাম কমার সুখবরেও দুঃসংবাদ আছে। সেটি হচ্ছে এখনো অস্থিরতা কাটেনি চালের বাজারে। মোটা চাল বেড়েছে কেজিতে তিন টাকা, মাঝারি মানের মোটা চাল বেড়েছে চার  টাকা। নাজিরশাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, সরকারের উচিৎ চালের বাজারে মনিটরিং করা। বাজারের অস্থিরতা কমাতে ছাত্ররা বাজার মনিটরিং করার কথা থাকলেও সব বাজারে এখনো ছাত্ররা যায়নি বলে ব্যবসায়ীরা চালের বাজার এখনো অস্থির করে রেখেছেন বলে ক্রেতারা মনে করেন। এদিকে টাউন হলের সবজি বিক্রেতা সুজন মন্ডল বলেন, ‘এতদিন মানুষ বাঁচব না মরব সেটা নিয়াই আতঙ্কে ছিল। বাজারে তেমন ক্রেতা আসে নাই। এবার একটা সমাধান হয়েছে, বাজারে ক্রেতা ভিড়ছে। আন্দোলনের শুরু থেকেই বেচাকেনা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এখন সব ঠিকঠাক হবে। খাদ্য মূল্য কিছুটা চড়া থাকলেও আশা করছি এটা বেশিদিন থাকবেনা। যদি পথে পথে চাঁদাবাজি না হয়, যদি সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া যায় তবেই পণ্যের দাম কমবে আর ক্রেতারাও খুশি হবে।’ 
জিনিসপত্রের দাম খবর পেয়ে অবশ্য ক্রেতারা ভিড় করেছেন বাজারে। তবে এখনো অনেক পণ্যের দাম বাড়তি বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন কয়েকজন। এদের মধ্যে শীলা আহমেদ বাজার করতে এসে রীতিমত ক্ষোভ ঝাড়লেন, ‘দেখুন কিছু কিছু সবজি তো হাতই দিতে পারছিনা। মসলার দাম কমেনি। তেলের দামও কমেনি। তাহলে জিনিসপত্রের দাম কমলো কোথায়। নতুন সরকার এসেছে আমরা চাই জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারদের একটু স্বস্তি দিক। স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের আর কিছু চাওয়া নেই।’ 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন