প্রভাত রিপোর্ট : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। জীবনের নিরাপত্তা ও সংস্কারের দাবিতে কর্মবিরতিতে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এমন অবস্থায় সড়কে নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন শিক্ষার্থীরা। তবে গত সোমবার থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। এখন প্রশ্ন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়ছেন কবে? গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের মতো আজও শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করছেন। পাশাপাশি আনসার, বিজিবি, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যরাও রয়েছেন। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ দেখা গেলেও সংখ্যায় সীমিত।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতদিন সড়কে পূর্ণাঙ্গ শৃঙ্খলা না ফিরবে, ততদিন আমরা রাস্তায় থাকতে চাই। এদিকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, একটি দুর্যোগ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সড়ক নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তবে এখন যেহেতু ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিয়েছেন, তারা দায়িত্ব পালন করছেন, সেহেতু শিক্ষার্থীদের আর রাস্তায় থাকার প্রয়োজন নেই। তাদের পড়ার টেবিলে ফেরার সময় এসেছে।
ঢাকা কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষে ৭ আগস্ট থেকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার এখনও কোনও নির্দেশনা আসেনি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যেভাবে কাজ শুরু করেছেন, তাতে আমরা না থাকলেও চলবে। তবে আবার যদি আমাদের প্রয়োজন হয়, দেশ গড়ার কাজ করতে প্রস্তুত আছি।
ধানমন্ডি এলাকায় সড়কে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ রফিক স্বাধীনকে। তিনিসহ কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী ভাগ হয়ে ধানমন্ডি সড়কে কাজ করছেন। কেউ লেন নিয়ন্ত্রণ করছেন, আবার কেউ ডানে-বামে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আবার কয়েক জন মোড়ের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। জানতে চাইলে স্বাধীন বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ ছাত্র-জনতা মিলে সুন্দর একটি দেশ গড়বো। যতদিন পর্যন্ত শৃঙ্খলা না আসছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি বড় সমস্যা। পুলিশ নেমেছে, তবে সংখ্যায় কম। তারা তেমন ভূমিকা রাখছে না। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরা পর্যন্ত আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।’
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি বিবিএ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সামি চৌধুরী বলেন, আমরা আরও তিন দিন রাস্তায় থাকবো। এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক আছে। তারা পুরোপুরি রাস্তায় না নামা পর্যন্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আমরা সহযোগিতা করবো।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের দেখা গেছে। তবে তুলনামূলকভাবে ট্রাফিক পুলিশ কম। জানতে চাইলে ট্রাফিক কনস্টেবল জুয়েল বলেন, রাস্তায় শিক্ষার্থী, আনসার ও বিজিবি সদস্যরা আছেন। আমাদের দুই জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর বেশি রাস্তায় প্রয়োজন নেই।
ট্রাফিক পুলিশ নামান পর সড়ক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা জানতে চাইলে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদুল বলেন, আমাদের সব ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। এখন আর শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন নেই। তবে এটা তাদের বিষয়। তারা রাস্তায় থাকবে না চলে যাবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।’
একই পরিস্থিতি দেখা গেছে শাহবাগ, কাওরান বাজার, খামারবাড়ি ও বিজয় সরণি এলাকায়। এসব এলাকায়ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, বিজিবি, আনসার, বিএনসিসি, স্কাউট সদস্য ও এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়কে কাজ করছেন।
ঢাকা মোট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, দেশের একটি দুর্যোগ সময়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করেছেন, এটা সত্যি অনেক প্রশংসনীয়। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করেছন। আমাদের সব সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, শিক্ষার্থীরা আমাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা চাইলে সড়ক থেকে চলে যেতে পারেন। তাদের পড়াশোনা আছে। তবে এটা তাদের বিষয়, তারা আমাদের সহযোগিতা করতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় স্বাগতম।