প্রভাত বাণিজ্য : পোল্ট্রি, গো-খাদ্য ও ফিশারিযের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যে চড়া দামে ফিড বিক্রি করছে, তাতে গত এক বছরে (২০২৩-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর এপ্রিল পর্যন্ত) অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নিয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। একইসঙ্গে সিন্ডিকেট করে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে হ্যাচারিগুলো মাত্র ৮ মাসেই ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করেছে, যার প্রভাব পুরোটা পড়ছে খামারি ও ভোক্তার ওপর। গত সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ফিডের দাম চড়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন বিশ্বব্যপী ফিড উপকরণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ে, তখন সব দেশেই ফিডের দাম বাড়ে। কিন্তু যখন গত বছর এসব উপকরণের দাম কমে তখন সে অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ ভারতে দাম কমতে থাকলেও বাংলাদেশে সে হারে দাম কমানো হয়নি।
এতে করে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বাড়তি দাম ধরে হিসাব করলে ফিড শিল্প গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে। প্রতি বছর কমপক্ষে ৮০ লাখ টন ফিড উৎপাদন করা হচ্ছে।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন আরও বলে, গত বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৫২-৫৭৫৭ টাকা। তখন থেকেই উৎপাদনকারীরা বাচ্চা বিক্রি করে ৭০ টাকা বা তারও বেশি দামে। উৎপাদনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরের ধাপে আরও ১০ টাকা বাড়নো হয় বাচ্চার দাম। কিন্তু বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়েও অন্তত ২৫-৩০ টাকা বেশি দামে বাচ্চা বিক্রি হতে থাকে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৮ মাসে বাড়তি দামে বাচ্চা বিক্রি করে হ্যাচারিগুলো অন্তত ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে বলে জানায় পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি মাসে ৮ কোটি পিস একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করে হ্যাচারিগুলো। সুমন হাওলাদার বলেন, 'দুঃখজনক বিষয় হলো যেখানে সরকারের সকল দপ্তর দাম কমানোর চেষ্টা করছে, সেখানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উল্টো সিন্ডিকেটের পক্ষে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।'
তিনি বলেন, ২০২২ সালের মে মাস থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ভুট্টা, সয়া মিলের দাম কমতে থাকে, ঠিক তখনই ভারতের বাজারে ফিডের দাম কমতে থাকে। ২০২৩ সালে ভারতে ফিডের দাম কমে দাঁড়ায় ৪১ থেকে ৪২ রুপি এবং ২০২৪ সালে দেশটির বাজারে আবারও ফিডের দাম কমে দাঁড়ায় ৩৬ থেকে ৪০ রুপি । আন্তর্জাতিক বাজারে দফায় দফায় দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই ফিডের দাম বাড়তেই থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজি ফিড বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭২ টাকা দরে।
সুমন হাওলাদার আরও বলেন, 'ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচের ৭৫ শতাংশ পোল্ট্রি ফিডে খরচ করতে হয়। তাই ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখতে ফিড মিল, হ্যাচারি ও ঔষধ কোম্পানিসহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি করছি।' সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, করোনা-পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত খামারিরা লোকসান করে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ, সিন্ডিকেটের কারণে খামারিরা মুরগি বিক্রি করছেন উৎপাদন খরচের নিচে। ১.৬০ লাখ খামারি থেকে কমতে কমতে বর্তমানে ৬০ হাজার খামারি টিকে আছেন।