রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

টাকা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

প্রকাশিত - ২২ আগস্ট, ২০২৪   ০৮:৫৭ পিএম
webnews24

আরাফাত দাড়িয়া : ব্যাংকের সংকট কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে যারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন তাদের খুঁজে বের করা। সাধারণ গ্রাহকদের অবশ্য শংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই, এটা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ বলেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, জুলাই মাসে অস্থিরতার সময় যারা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন তাদের খুঁজে বের করে টাকার উৎস এবং এর হিসাব নিবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, অস্থিরতার সময় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে দেয়ার চক্রান্ত করেছিলো স্বার্থন্বেসী একটি মহল বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের। 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি তথ্য বলছে, জুন-জুলাই মাসে ব্যাংক থেকে প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে গেছে। অর্থনীতিকে পঙ্গু করতেই টাকা সরানো হয়েছে বলে দাবি অর্থনীতিবিদদের। আবার কোন কোন গ্রাহক জুলাই অস্থিরতার কারণে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। তবে অভিযোগের তীরটা দুর্নীতিবাজদের দিকেই। জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যাংক থেকে নিরাপদ স্থানে রেখেছেন কেউ কেউ। অনেকেই আবার বিপদের আশংকায় নিজের কাছেই সংরক্ষণ করেছেন অর্থ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া অর্থ আবার ফিরিয়ে আনাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত ব্যাংক থেকে টাকা সরানোর প্রক্রিয়াকে আটকাতে সরকার ইতিমধ্যে টাকা উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। একজন গ্রাহক দিনে ৩ লাখের বেশি উত্তোলন করতে পারবেন না।
সরকার অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে সম্প্রতি কয়েকটি অভিযানে বিপুল পরিমাণে টাকা উদ্ধারের কারণে। গত ১৬ আগষ্ট মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শাহ কামাল বাসা থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা উদ্ধার হয়। তবে গুঞ্জন আছে, সেই বাসা থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিলো। আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমুর ঝালকাঠি বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণে টাকা উদ্ধার হয়। বরিশালে এক প্রকৌশলী কোটি টাকা নিয়ে পালানোর সময় আটক হন। এরকম অসংখ্য লোকের হাতে টাকা থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে তারল্য সংকটে ভুগছে। এটা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ প্রসংগে বলেন, ‘মানুষের ব্যয় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোরও একটু সমস্যা তৈরি হয়েছে। সবকিছু মিলে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে, যে কখন কি হয়। যদি ব্যাংক পরেরদিন বন্ধ হয়ে যায় সেই শংকাও কাজ করে অনেকের মনে। মাল্টিপাল কারণেই কিন্তু আমরা এসব দেখতে পাচ্ছি।’ 
জানা গেছে, অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সরিয়ে ফেলছেন অনেকে। টাকা তুলে বিদেশী মুদ্রায়ও রূপান্তর করে পাচার করছেন কেউ কেউ। জুলাই পরিস্থিতির কারণে যাদের কালো টাকা আছে তারাও ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। আবার কালো টাকার মালিকরা তাদের গচ্ছিত অর্থের হিসাব দিতে পারবেন না বলে বিদেশী মুদ্রায় রুপান্তর করছেন, অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করছেন। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অনেকে ধরবে কেন আপনি টাকা নিলেন, অ্যাকাউন্ট খুললেন। সো ব্যাংকগুলোর উপর দায় বর্তায়। অনেক সময় তাই কালো টাকা যাদের রয়েছে তারা ব্যাংকে আসেননা। ঘরেই রেখে দিচ্ছেন। আবার অনেকে এই টাকা দিয়ে বিদেশী মুদ্রা কিনে রাখে।’ 
খুব শীঘ্রই কালো টাকা এবং দুর্নীতিবাজদের ধরতে অভিযানে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন শৃক্সক্ষলাবাহিনী। যৌথ এই অভিযানের আগে ব্যাংকগুলোর সংস্কার চান অর্থনীতিবিদরা। কারণ গত ৬ মাসে ব্যাংক থেকে ৪৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বাইরে চলে গেছে। এই টাকা ফেরত আনতে গেলেও ব্যাংকের সংষ্কার খুব বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সাথে মতবিনিময়কালে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান দাবি করেন ব্যাংকের সংস্কার না হলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে একটি রূপকল্প তৈরি করুন। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ লাগবে।’ জুলাই অস্থিরতার সময় ব্যাংক থেকে যে পরিমাণে টাকা বাইরে গেছেÑ তা যেন বন্ধ হয় সেই বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘যে সব অন্যায় অবিচার কিংবা দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিল তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। হতো এই কারণে তারা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। বড় বড় অংকের টাকা যারা তুলেছেন তাদের সবই দুর্নীতির টাকা। তারা বাসা কিংবা কোথাও লুকিয়ে রাখছে যেন তারা ধরা না পড়ে। পালিয়ে যাওয়ার সময় কাজে লাগবে; কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করবেন। এমনটা যেন না ঘটতে পারে; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’  

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন