বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

সকল অচলায়তন ভেঙ্গে দেশের শিক্ষা  কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক করা হোক

প্রকাশিত - ২৩ আগস্ট, ২০২৪   ০৭:৫৮ পিএম
webnews24

সম্পাদকীয় 

দেশের শিক্ষাঙ্গনে সব কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক করার বিকল্প এখন আর কিছু নেই। খবরে প্রকাশ, চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। তাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে দফায় দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ওই সরকার পতন-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এলাকার থানায় হামলা হয়। সেসব থানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষা বোর্ড জানায়, ১১ আগস্টের পরিবর্তে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে। কিন্তু মঙ্গলবার দেশের সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করেছে সরকার। যদিও পরীক্ষার ফলাফল কীভাবে নির্ধারণ ও প্রকাশ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেদিন জানানো হয়নি। তবে গত বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন যে পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট ও প্রি-টেস্টের মূল্যায়ন পত্র নেয়া হবে। যদিও কীভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা বোর্ড। যদি স্থগিত পরীক্ষাগুলোর বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নপত্র প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নিয়ে ফলাফল তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সহজ ও সুষ্ঠু উপায়ে মূল্যায়নপত্র প্রদান করে তা নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরীক্ষা কার্যক্রমসহ শিক্ষাঙ্গন দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে। নয়তো তাদের উচ্চ শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষার্থীদের উচিত এখন লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া।
এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল এরই মধ্যে সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষা এবং স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হোক। কারণ গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তারা মানসিক চাপের মুখে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নয়। এখনো তাদের অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। তাই এ অবস্থায় স্থগিত পরীক্ষাগুলো তারা আর দিতে চায় না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাড়াও কোনো কোনো শিক্ষাবিদও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্তÍএ বিচারে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবে অটোপাস কোনো সমাধান হতে পারে না উল্লেখ করে কেউ কেউ বলছেন স্থগিত পরীক্ষা বাতিল ভবিষ্যতে ২০২৪ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আরো চাপের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। উচ্চ শিক্ষা, চাকরির বাজারে এ পরিপ্রেক্ষিতে নানা বেগ পোহানোসহ সামাজিকভাবে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরূপ ঘটনা কভিডের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না দিয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
সেই সময় এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের অটোপাস জেনারেশন নামে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়, সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসুবকে যাকে বলা হয় ‘ট্রল’। যারা পরিশ্রমী শিক্ষার্থী তাদের ওপর এটি এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ হবে। এ ম্যাপিং বা অটোপাস পদ্ধতিতে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন সম্ভব নয়। তাই অপারগ শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে বাকিদের পরীক্ষা নেয়া হোক। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, অটোপাস দেয়া হলে শিক্ষার্থীদেরই ভুগতে হয়। তাই কষ্ট করে হলেও পরীক্ষা দেয়া উচিত ছিল। সরকারেরও বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়ার দরকার ছিল। এমনকি পরীক্ষার্থীদের একাংশেরও মত, এইচএসসির ফলাফল শুধু এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হলে এসএসসিতে খারাপ ফলাফলের কারণে অনেকেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরমই তুলতে পারবে না। তাদের অনেকেই পরীক্ষা হলে হয়তো এইচএসসিতে ভালো ফল করতে পারবে। এ শিক্ষার্থীদের দাবি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের বিষয় ম্যাপিং কিংবা অটোপাস আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবশিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। 
সরকার স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একটি জরিপ পরিচালনা করতে পারত। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর মাধ্যমে আহত শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত। এ বিকল্প ব্যবস্থা ম্যাপিং ছাড়াও অন্য কিছু হতে পারত। যেমন সাবজেক্ট ভিত্তিতে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া। যেটা করোনাকালে করা হয়েছিলÍশিক্ষার্থীর পড়ালেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তার পরও দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় ছন্দপতন হয়েছিল, যারা পরবর্তী সময়ে আর সেভাবে পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারেনি। তাই পুনরায় এ পথে হাঁটা কতটা যথোচিত তা নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। অবশ্য, স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এ নিয়ে আরো অনেক আলোচনা ও চিন্তার অবকাশ ছিলÍএ কথা শিক্ষা উপদেষ্টা নিজেও স্বীকার করেছেন। তবে সচিবালয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছে। উপরন্তু যেহেতু পরীক্ষা হওয়া ও না-হওয়া এক ধরনের বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নিÍএ প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা না হওয়াটাই সমীচীন বলে মনে করেছে কর্তৃপক্ষ।
উপদেষ্টার এসব কথা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করা যায় না। তবে কেউ যেন অবমূল্যায়নের শিকার না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে ভাবা উচিত এবং সে মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা উচিত। দীর্ঘদিন আন্দোলনের ফলে যেসব শিক্ষার্থী পড়ার টেবিলে বসতে পারেনি, এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের পড়ালেখায় ফেরানো হয়তো সহজ হতে পারত, কিন্তু যেহেতু সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব না তাই যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ স্বাভাবিকীকরণে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক ট্রমা থেকে বেরিয়ে পড়ালেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে শিক্ষার্থীদের। তাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ যাতে ব্যাহত এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে না পারেÍসেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে আবারো বিরূপ পরিস্থিতি হলে ম্যাপিং বা অটোপাসের বাইরে আর কী করা যায়, সে বিষয়েও প্রস্তুতি রাখা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে বলেই সবার প্রত্যাশা।


 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন