সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

চাপে ক্ষমতাসীনরা উত্তরণ জরুরী 

প্রকাশিত - ২৫ জুন, ২০২৪   ০৭:৫৬ পিএম
webnews24

মৃণাল বন্দ্য : টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের থাকার কথা খোশ মেজাজে। তার উপরে দলটি এমন এক সময়ে ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছে যখন দলটি দাপটের সাথে ক্ষমতায়। সব মিলিয়ে আনন্দে আত্মহারা থাকার কথা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের। চারদিকে ঢাক ঢোল বাজিয়ে আর আলোর ঝলকানিতে আড়ম্বর ভাবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করলেও ভেতরে ভেতরে এক মারাত্মক চাপে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ আর আতংক। একই সাথে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসন আর স্থানীয় সরকারের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামের আগে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ছিলো মুসলিম শব্দটি। কিছুদিন পরে সাম্প্রদায়িক ভাবনা থেকে সরে আসে দলটি এবং আসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে নামকরণ হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এতোদিন সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সিংভাগ ভোট গেছে তাদের বাক্সেই। ইদানিং বিভিন্ন সংসদ সদস্য আর স্থানীয় প্রতিনিধিদের বিব্রতকর মন্তব্য আর কার্যকলাপে আস্থা হারাচ্ছে দলটি। ২০২১ সালের দুর্গা পূজায় কুমিল্লায় মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর এবং এর পরের বছরে স্থানীয় এমপি বাহারের সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের মুখোমুখি অবস্থান, আওয়ামীলীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের নিরব ভূমিকায় হতবাক হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বলা হয়ে থাকে খালি মাঠে গোল না দিয়ে যদি নিরপেক্ষভাবে ভোটের মাঠে আসে আওয়ামী লীগ,ভোট ব্যাংক বলে পরিচিত হিন্দুদের অনেক ভোট হারাবেন তারা।   

আওয়ামী লীগ নেতারা যতই গলা ফাটান না কেনো মাইকে, মাঠপর্যায়ের চিত্র কিন্তু উল্টো। নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৭০ শতাংশের বেশি মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজন কিংবা ঘনিষ্ঠ, যা নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আধিপত্য বিস্তারে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৩৩ জন বর্তমান মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজন। আরও তিন শতাধিক বিজয়ী চেয়ারম্যান স্থানীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পছন্দের। সব মিলিয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের সংখ্যা ৩৫০, যা মোট উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রায় ৭৭ শতাংশ। তীব্র ক্ষোভ বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ত্যাগী নেতারা। উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রীরা যে কেন্দ্রের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে স্বজনদের দাঁড় করিয়েছেন এবং জিতিয়েছেন তাতে সরকার বা দল কোন ব্যবস্থা নেয়নি বা নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ছায়ায় থাকা অনেক এম পি যারা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তারা এবার বিগত বছর গুলো থেকে সবচেয়ে চাপে রেখেছেন সরকার এবং এর মন্ত্রীদের। নিক্সন চৌধুরী কিংবা ফেসবুক এমপি বলে পরিচিত সুমন সাহেবরা কাজের চেয়ে কথা বলেন বেশি আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বেকায়দায় ফেলছেন সরকারকে। 

নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিত্যপণ্যের দাম কমানো। কিন্তু সেটি তারা করতে পারেনি। বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর গত পনের বছরে যদি কোনো খাতে বড় ধরনের ধস নেমে থাকে, সেটা হলো ব্যাংকিং খাত। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলেছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনা। গত ১৩ মে তিনি কলকাতায় খুন হন। সোনা চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁকে খুন করা হয় বলে সংবাদমাধ্যমে আসলেও এখন প্রকাশ্যে আসছে দলীয় বিরোধের চিত্র। বেশ কয়জন স্থানীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। জানা গেছে এই খুনের পরিকল্পনা হচ্ছে বেশ কয়েকবছর আগে থেকে। এখন প্রশ্ন হলো একজন সংসদ সদস্যকে খুনের এই পরিকল্পনা কেনো গোয়েন্দা জালে ধরা পড়লো না? খুনের পর খুনি বের করা কি বেশি কৃতিত্বপূর্ণ কাজ নাকি আগে সেই প্ল্যান ধরে ফেলা? একজন সংসদ সদস্য এভাবে খুন হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন এসেই যায়! 

আওয়ামী লীগ কিংবা এর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিংবা এদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ শীর্ষ নেতৃত্ব। আর সাম্প্রতিক সময়ে ছেলের ছাগল-কান্ডে প্রকাশ্যে এলেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমান। আমার আপনার ট্যক্সের টাকায় উনার রাজকীয় জীবন যাপন কিসের ইঙ্গিত দেয়? এরকম হাজারো মতিউর আছে, যারা সরকারের ছায়ায় নিজের আখের গুছাচ্ছেন। 

প্রতিবারের মতো এবারো পবিত্র হজের সময় নিশ্চিন্ত মনে যেতে পারেননি হাজীরা। সংসদে ধর্মমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী উনারা ৮ মাসই ব্যস্ত থাকেন হজের প্রস্তুতি নিয়ে। আর হজের সময় এলেই সব গরমিল! সরকারের ৫ এমপির অধিক লোভের বলি হয়ে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধারা। সরকার নিরব! সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য আর মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ নিয়ে চারপাশে উদ্বেগ, রোহিঙ্গা ইস্যু সমধান না হওয়া, সব মিলিয়ে প্রচণ্ড চাপ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। ৭৫ বছরের অভিজ্ঞ দলটিকে এই চাপ কাটিয়ে উঠতে হবে দ্রুত। নইলে দ্রুত বাড়তে থাকবে আন্তর্জাতিক চাপও!
mrinalbanday@gmail.com 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন