বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি ৩ শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে নেয়া সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দলটিকে দুর্বল করেছে। সাংগঠনিক-রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সহজসাধ্য উপায়ও খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার নির্দেশ ছিল বিএনপি হাইকমান্ডের। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তাদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদ, সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান, সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন একাধিক জন। এরশাদের জাতীয় পার্টির চেয়ে তুলনামূলকভাবে তাদের ফল অনেক ভালো। জাতীয় পার্টি সব ক’টি উপজেলায় প্রার্থী দিয়েও বিজয়ী হয়েছে মাত্র ১৮ জন। অত্যন্ত অভাবনীয় ফলাফল জাতীয় পার্টির মাঠের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)সহ জাতীয় পার্টির নামের ও অন্যান্য ছোট দলগুলোও দেশের কোথাও কোন একটি পদেও কেউ জয়লাভ করেনি।সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি, বিশেষকরে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ আসেনি। মন্ত্রী, এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের প্রার্থীদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। গোড়ার দিকে এ অভিযোগ ছিল ব্যাপক। শেষপর্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ, কঠোর নির্দেশে মন্ত্রী, এমপিদের অবৈধভাবে প্রভাব সৃষ্টি থেকে বিরত রাখা হয়। তবে এদের ভূমিকা সরকারকে বিব্রত ও জনমনে ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা থাকায় বিএনপির উল্লেখিত নেতারা নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে এদের অংশগ্রহণ নির্বাচন কেন্দ্রিক সরকারের অবস্থানকে সংহত করেছে। বিএনপির এই নেতাদের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমবেশি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিএনপির এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সমর্থন রয়েছে তাদের পেছনে। উপজেলা নির্বাচনে এদের বৃহত্তর অংশই প্রার্থীদের পক্ষে ভূমিকা রাখেন। বিএনপি প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করলেও তাদের পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালনকারী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। দলের এসব নেতাকর্মীরা শেষপর্যন্ত দলের জন্য সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিকর কিছু আর করবে না কেন্দ্রীয় নির্দেশের বাইরে যাবে না বলেই বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রমে সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে বলেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আশা করছে। বহিষ্কৃতরা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন যে, দলের বহিষ্কৃতদের আবার ফিরে আসার একটা সুযোগ দেয়া হতে পারে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহসচিবের বরাবর লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভবিষ্যতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার অঙ্গীকার করতে হবে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রত্যাশায় হাইকমান্ড নমনীয়তার নীতি নিতে পারে। তবে এ ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। বিষয়টি চিন্তাভাবনার পর্যায়ে রয়েছে।