শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

চীন সফরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে সহায়তা চাওয়া হবে

প্রকাশিত - ০১ জুলাই, ২০২৪   ০৯:২৬ পিএম
webnews24
অনলাইন ডেস্ক

বিশেষ প্রতিনিধি  : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুটি বৃহৎ সেচ প্রকল্প ঢাকা-চট্টগ্রাম উড়াল রেল মোটা অঙ্কের ঋণ সুবিধার অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে। প্রকল্প দুটির একটি তিস্তা মহাপ্রকল্প, অপরটি গঙ্গা ব্যারাজ। দুটি প্রকল্পই বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি, কৃষক, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য জরুরি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা দেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। উজানে ভারত থেকে পানি সরিয়ে নেয়ায় ভাটির এলাকা বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রীতিনীতি অনুযায়ী ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে বাংলাদেশকে। তিস্তা চুক্তি হলে বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি রক্ষার পথ হবে। কিন্তু তিস্তা চুক্তি অধরাই থেকে যাচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার নামে বাংলাদেশের মানুষকে আগামী আরও ১০ বছর পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত রাখা হবে। তবে অন্তর্বর্তী চুক্তি করার কথাও ভাবনা রাখা হয়েছে। মোদির ঢাকা সফরকালে অন্তর্বর্তী তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চীনের সহায়তা চাওয়া হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যাায়ের সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গার প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিব্বতে পাহাড় কেটে প্রবাহমান স্রোত সরিয়ে নেয়ার বিশাল ব্যয়বহুল প্রকল্প নিয়েছে চীন। তিব্বতে বিপুল হিমাবাহ থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি ও প্রবাহ। চীন স্রোত সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে আলোচনা করবেন। চীন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী গঙ্গার প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশেই সেচ, কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয় তুলে ধরবেন বলে আভাস পাওয়া যায়।
তিস্তা ও গঙ্গার পানি জনসাধারণের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে একরকম সহায়তা ভারতের যেমনি সহায়তা চাওয়া হয় চীনের কাছে চাওয়া হবে বলেও জানা যায়।
বিগত ষাট বছর সরকার ডিলেঢালা ভাব নিয়ে চললেও এখন পরিস্থিতির চাপে পড়ে সরকার এখন গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। গঙ্গা ব্যারাজের স্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাস্তবায়ন কাজও শুরু করা হবে আগামী দু’বছরের মধ্যে। অর্থাৎ সরকারের চলতি মেয়াদেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালে প্রকল্পটি নেয়া হয়। ১৯৬০ সালে প্রথম গঙ্গা ব্যারাজের স্থান নির্বাচনের জন্য সীমাক্ষা চালানো শুরু হয়। ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চারটি সমীক্ষা পরিচালিত হয়। কতিপয় ব্যারাজ অপশন নির্ধারণের জন্য ২০০২ সালে প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো হয়। রিভার মারফোলজির উপর বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর কুষ্টিয়া জেলার ঠাকুরবাড়ি ও রাজবাড়ী জেলার পাংশায় ব্যারাজ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন করা হয়। পরে ঠাকুরবাড়ি অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। সরকারের গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাড়াও দেশের খ্যাতিসম্পন্ন পানি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী কোনো ঝুঁকি না নিয়ে পাংশায় নির্ধারিত স্থানের উজানে আরও উঁচু এলাকা প্রকল্পের জন্য অধিকতর উপযুক্ত হবে বলে মত দেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী পাশংকারই আরও উঁচুতে সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিক সমীক্ষা থেকে গঙ্গা ব্যারাজের জন্য পাংশাই নির্ধারিত হয়েছে। ঐ বছরেই চূড়ান্ত সমীক্ষা শেষ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা জানান যে, তাদের বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সমীক্ষা শেষে বাছাই করা স্থান অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত স্থান ঘোষণা করবে। সরকার গঙ্গা ব্যারাজের ব্যাপারে গভীরভাবে আগ্রহী। দেশের কৃষি অর্থনীতি, সেচ, মৎস্যসম্পদ, জীববৈচিত্র্যসহ সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ওই প্রকল্প জরুরি। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পাবনা ও রাজশাহী জেলার প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। চীন তিব্বতে পাহাড় কেটে প্রবাহমান স্রোত সরিয়ে নেয়ার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়িত হলে ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যাবে। ফলে গঙ্গার প্রবাহও মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশেরই সেচ কাজ কৃষি উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। সম্ভাব্য ওই অবস্থার মোকাবেলায় গঙ্গা বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই। বর্ষায় নদ-নদীর বর্ধিত প্রবাহ, বৃষ্টির পানি ধরে রাখবে এ প্রকল্প। চীনের সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও পানি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনায় সমস্যার বাস্তবভিত্তিক গ্রহণযোগ্য সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টাও করা হবে বলে জানা যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ধারণযোগ্য বিশাল জলধার হবে গঙ্গা ব্যারাজ। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৬৫ কিলোমিটার। পাংশা থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পাংশা নামক স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত। গঙ্গা নির্ভর এলাকার নদীসমূহে জলাধারে পানি প্রবাহ বাড়াবে। নদীর সিলটেশন ভাটির দিকে ঠেলে দেবো। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর করবে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে তিন লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। জাপান, নেদারল্যান্ডস, কুয়েত, ডেনমার্ক এতে অর্থায়নে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। চীন, ভারতও কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অতিরিক্ত ২৫ লক্ষ মে.টন চাল উৎপাদিত হবে। মৎস্যসম্পদ বিপুলভাবে বাড়বে। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা অনেকাংশে মনে যাবে।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন