রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

বাংলাদেশে রেল ট্রানজিট ও তিস্তা বিতর্ক 

প্রকাশিত - ০৪ জুলাই, ২০২৪   ০৮:২৮ এএম
webnews24
নিজেস্ব প্রতিবেদক

প্রভাত রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি দিল্লি সফরে ভারতকে রেল ট্রানজিট ও করিডর দেয়া এবং তিস্তা পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ভারতের যুক্ত হওয়ার সমঝোতার ঘোষণা আসার পর কিছুদিন পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে এই ইস্যুগুলোতে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক দানা বেঁধেছে, বিরোধী দল বিএনপিও সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছে– তবে ভারত কিন্তু এখনও প্রবল আত্মবিশ্বাসী যে এই পদক্ষেপগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে এবং তা দুই দেশের মানুষের জন্যই উপকার বয়ে আনবে।
রেল ট্রানজিট প্রশ্নে ভারত সরাসরি জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সংযোগকে পরের ধাপে উন্নীত করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। সুসম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।
পাশাপাশি দিল্লির তরফে এই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ভূখ- দিয়ে ভারতের রেলগাড়ি চললে কী হারে মাশুল, শুল্ক বা ট্রানজিট ফি আদায় করা হবে এবং ওই ট্রেনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, এই সব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসবে। 
তিস্তার জল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশে যে প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার অঙ্গীকার করেছে কিংবা গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে যে আলোচনা শুরু করার কথা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস তাতে আপত্তি তুললেও সেগুলো থেকেও এতটুকু সরে আসার কোনও পরিকল্পনা ভারতের নেই বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এর মধ্যে কেন্দ্রকে চিঠি লিখে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাজ্যবাসীর স্বার্থের সঙ্গে আপস করে বাংলাদেশের সঙ্গে জল নিয়ে কোনও চুক্তি তিনি মেনে নেবেন না। কিন্তু তার এই হুমকিকেও আমল দেয়া হচ্ছে না, অন্তত এখনকার মতো তো বটেই! তবে দিল্লিতে একাধিক পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্কের গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে রেল ট্রানজিট বা তিস্তা প্রকল্পের মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়িত করতে হলে ভারতকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও বড়সড় ছাড় দিতে হবে বলে তাদের ধারণা। সেগুলো কী হতে পারে, তা এখনই স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশকেও ভারতের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়ক ট্রানজিট, তিস্তা প্রকল্পে ভারতের অর্থায়নের একটা বড় অংশ ঋণের বদলে অনুদানে (‘গ্রান্ট’) পরিবর্তন করা– এই সব সম্ভাব্য ছাড়ের কথা তারা উল্লেখ করছেন। তবে ভারত সরকারের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের ভেতরে বিরোধী দলীয় দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে যে এই সব উদ্যোগের বিরোধিতা করা হচ্ছে, সেটাকে দিল্লির সরকারি কর্মকর্তারা বা ভারতের কূটনৈতিক মহল বিশেষ একটা আমল দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, গত দশ-পনেরো বছরে বাংলাদেশে ভারতের বহু উদ্যোগই সে দেশে একটা অংশের মানুষের বাধার মুখে পড়েছে– কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুদেশের সরকারের সদিচ্ছায় সেই সব প্রকল্পই সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে, দুদেশের মানুষই তা থেকে লাভবান হচ্ছেন।
গত ২২ জুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর মধ্যেকার বৈঠকের পরই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা যে ব্রিফিং করেছিলেন, তাতেই তিনি এই দুটো প্রকল্পের রূপরেখার বর্ণনা দেন। রেল ট্রানজিট প্রসঙ্গে তার বক্তব্য ছিল, এটা হলো ভারতেরই একটা অংশ থেকে আর একটা অংশে যাওয়া, যেখানে ট্রেন যাবে বাংলাদেশের ভূখ-ের ভেতর দিয়ে। এটা বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় দেশেরই মানুষ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি দাবি করেন। জুলাইতেই গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত রুটে এই রেলপথে মালবাহী ট্রেন পরীক্ষামূলক চলাচল করবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন।


প্রভাত/টুর

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন