প্রভাত রিপোর্ট : অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিরদের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক অবসর ও চাকুরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আইনগত বিধান রয়েছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ রয়েছে। কিন্তু নেই কার্যকারিতা। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য সরকারি কর্মচারীদের লঘু ও গুরুদ-ের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এগুলো প্রয়োগ হয়না সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও। নিয়মিত নজরদারির অভাবে প্রশাসনের সব স্তরে লাগাম ছাড়াচ্ছে দুর্নীতি।
যাদের দুর্নীতি সামনে আসছে, তারা অনেক দিন ধরেই এটা করছেন। নজরদারি না থাকায় এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের তথ্য এসেছে। এমন বহু সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন; নজরদারি না থাকা কিংবা দুর্নীতি রোধে বিধি-বিধান বাস্তবায়নের আন্তরিক পদক্ষেপ না থাকায় এরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
জনপ্রশাসন সূত্রে আরো জানা যায়, দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান রয়েছে। লঘুদন্ড হিসেবে তিরস্কার,পদোন্নতি,বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা,সরকারি আর্থিক ক্ষতির অর্থ আদায়,বেতন গ্রেডের অবনমনের বিধান রয়েছে। গুরুদন্ডে বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারন করা যায়।
বিধিমালায় দুর্নীতি’র বিষয়ে বলা হয়েছে- কোনো কর্মচারী যদি দুর্নীতি পরায়ণ হন বা নি¤œ বর্ণিত কারণে দুর্নীতি পরায়ণ বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিবেচিত হন- তিনি বা তার ওপর নির্ভরশীল বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি তার মাধ্যমে বা তার পক্ষে যদি তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো অর্থ সম্পদ বা অন্য কোনো সম্পত্তির (যার যুক্তিসঙ্গত হিসাব দিতে তিনি অক্ষম) অধিকারী হন। বা তিনি প্রকাশ্য আয়ের সঙ্গে সংহতিবিহীন জীবন যাপন করেন বা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি পরায়ণতার অব্যাহত কুখ্যাতি থাকে। এসব ক্ষেত্রে ওই কর্মচারীকে শাস্তি দেয়া যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের
সীমাহীন দুর্নীতি ও বিপুল বিষয় সম্পদের মালিক হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। দুর্নীতি,অনিয়মের সাথে জড়িতেদের মধ্যে একটা ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় ইতিমধ্যে করে সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ হিসাব নিশ্চিতের জন্য গত মঙ্গলবার নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আদায়, বেতন গ্রেডের নি¤œতর ধাপে অবনমিত করা হচ্ছে লঘুদ-।
এক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্য যে কোনো দ-, তবে ওই অপরাধের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে নি¤œপদ বা নি¤œ বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ দ- ছাড়া যে কোনো দ- দেয়া যাবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীরা বড় বড় অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিগত বছরগুলোতে এমন শাস্তি দেয়ার নজির নেই। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেটারও বাস্তবায়ন নেই। বছরের পর বছর সম্পদের হিসাব না দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মচারীদের কোনো জবাবদিহিতাও নেই।
দুর্নীতি রোধে আইন ও বিধি-বিধানের কমতি নেই বলে মনে করেন কোনো কোনো কর্মকর্তা ও সাবেক আমলা। তারা বলছেন, যা আছে তা শক্তভাবে কার্যকরের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। মূল সমস্যা নজরদারিতে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রভাত/টুর