বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

রাজনৈতিক রেষারেষি নয় মানবিক-দরদি রাষ্ট্রই সবার কাম্য

প্রকাশিত - ১৮ আগস্ট, ২০২৪   ০৯:০৪ পিএম
webnews24

 

আবু মকসুদ : ইলেকট্রনিক মাধ্যম, প্রিন্ট মাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম সবখানেই একই ঢেউÑ মানবিকতা। অর্থাৎ আমাদের আরও মানবিক হতে হবে। মানুষ মানবিক হয়ে গেলে কোনও সমস্যা অবশিষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশের মূল সমস্যা যে রাজনৈতিক রেষারেষি, সেটারও সহজ সমাধান হয়ে যাবে যদি মানুষ মানবিক হয়ে যায়। সব সমস্যার সংকট উত্তরণের জন্য একটি শব্দকেই আমরা আঁকড়ে ধরে পেরিয়ে যেতে পারবো। শব্দটা হলো মানবিকতা। আসুন, জেনে নিই মানবিকতার অর্থ আসলে কী। মানবিকতা মূলত একজন ব্যক্তির মধ্যে অন্যের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং উদারতার মতো গুণাবলি প্রকাশ পাওয়ার বিষয়। মানবিকতা এমন এক গুণ যা মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে শক্তিশালী করে এবং সমাজকে সুখী ও শান্তিময় করে। মানবিক হওয়ার মানে হলো অন্যের কষ্ট বুঝতে পারা এবং সেই কষ্ট কমানোর জন্য নিজের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করা। মানবিকতা হলো মানুষের সত্যের উচ্চতর রূপ, যেখানে ব্যক্তি নিজের চেয়ে অন্যের মঙ্গলকে প্রাধান্য দেয়। একজন মানবিক ব্যক্তি কেবল নিজের কথা ভাবেন না; তিনি অন্যের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে চান। মানবিকতা সমাজের বিভিন্ন স্তরে শান্তি, সমতা ও সৌহার্দ্য বয়ে আনে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারও পক্ষে কি নিজের চেয়ে অন্যের মঙ্গল প্রাধান্য দেয়া সম্ভব? উত্তরে বলা যায় যে বিষয়টা অসম্ভব নয়। আমাদের মানব ইতিহাসে হাজার হাজার উদাহরণ আছে, যেখানে ব্যক্তি নিজের মঙ্গল চিন্তা না করে মানুষের মঙ্গলকে প্রাধান্য দিয়েছে। পুনরায় প্রশ্ন হচ্ছে, যারা অন্যের মঙ্গলকে প্রাধান্য দেয়, তারা হয়তো সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু উঁচু স্তরের, অর্থাৎ মহামানব পর্যায়ের। সাধারণ মানুষের পক্ষে কি নিজের মঙ্গল ব্যতিরেকে অন্যের মঙ্গলকে প্রাধান্য দেয়া সম্ভব? এর উত্তরও বলা যায়, হ্যাঁ, সম্ভব। প্রতিদিনকার জীবনে আমরা অনেক সাধারণ মানুষকেও দেখি যারা পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা সমাজের জন্য নিজের মঙ্গলকে বিসর্জন দিচ্ছেন। অর্থাৎ, নিজের প্রাপ্যকে ত্যাগ করছেন পরিবারের সদস্যের জন্য, বন্ধুর জন্য অথবা সমাজের মঙ্গলের জন্য। নিজের ভালোলাগা এবং প্রাপ্যকে ত্যাগ করা খুব সহজ নয়, তবে মানসিকতা, শিক্ষা, মূল্যবোধ ও জীবনের অভিজ্ঞতায় কেউ কেউ নিঃস্বার্থভাবে অন্যকে প্রাধান্য দিতে পারে।
আসুন, উপরোক্ত কথাগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করি। বাংলাদেশের বর্তমান হাল একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস, ঘৃণা, হিংসা এবং প্রতিশোধপরায়ণতা। এর মধ্যে আমরা মানবিকতা কীভাবে প্রয়োগ করবো কিংবা কীভাবে খুঁজবো? শুরু করি রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনীতিবিদদের নিয়ে। পুলিশ, বিজিবি, আর্মি, র‌্যাবÑ রাষ্ট্রে এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু শুধু আইন প্রয়োগ করাই যথেষ্ট নয়। যারা আইন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকেন, তাদের হৃদয় যথেষ্ট পরিমাণে মানবিক হতে হবে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে মানবিক হৃদয় নিয়ে কাজ করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা তাদের প্রতি বাড়বে। মানুষের কষ্ট ও দুর্দশা বুঝতে পারলে তারা আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি মানবিক হতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের দায়িত্ব কীভাবে পালন করবে? অর্থাৎ তারা কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানবিক হতে পারবে?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জীবন বিপন্ন করে দেশের সুরক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি। সম্মানজনক আচরণ যেমন ধন্যবাদ জানানো বা প্রশংসা করা, তাদের প্রতি মানবিক আচরণের একটি সূচনা হতে পারে। পুলিশের কাজ আইন প্রয়োগ এবং অপরাধ প্রতিরোধ করা; তাদের কাজের গুরুত্ব এবং চ্যালেঞ্জগুলো বুঝা এবং তাদের এই ভূমিকাটি স্বীকৃতি দেয়া যে সাধারণ মানুষ তাদের মিত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চাপ ও মানসিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের পরিস্থিতি বোঝাÑ এগুলো তাদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শনের একটি উপায়। পুলিশ, আর্মি এবং বিজিপি সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকলে এটিও সম্পর্ক উন্নতিতে কাজে আসতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক বা কমিউনিটি ইভেন্টে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে মানুষ তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করতে পারে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক গড়তে পারে।
সামাজিক এবং রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে নেতিবাচক কথা বলা হয়। এর পরিবর্তে তাদের প্রতি সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করা এবং তাদের কার্যক্রমের প্রতি ধৈর্যশীল হওয়া; শত্রু না ভেবে মিত্র হিসেবে দেখতে সাহায্য করবে। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য মানবিক কাজ করেন বা সমাজের জন্য ভালো কিছু করেন, তা প্রশংসা করা এবং সামাজিক মাধ্যমে বা ব্যক্তিগত আলোচনায় তা তুলে ধরা, তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সহায়ক হতে পারে। পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ানোর জন্য তাদের কাজের উদাহরণ প্রকাশ্যে তুলে ধরা এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা যায়। এতে আমাদের শান্তি ও সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সম্পর্ক উন্নত করতে পারবে।
যদি কোনও নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিরোধ তৈরি হয়, তাহলে সেই পরিস্থিতির মূলে গিয়ে তার সমাধান খুঁজে বের করা উচিত। একে অপরকে দোষারোপ না করে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে যদি পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সহযোগিতা থাকে, তাহলে তারা একসঙ্গে কাজ করে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে পারবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শত্রু নয় বরং মিত্র হিসেবে দেখা উচিত এবং তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করা উচিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা যদি রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের মানবিকতার দিকে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে কী কী করতে হবে? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূলত রাজনীতি নির্ভর হয়। আমাদের রাজনীতিবিদরা যদি মানবিক হতে পারেন, তাহলে আইনশৃঙ্খলার মানুষেরাও মানবিক হয়ে যাবে। রাজনীতিবিদদের মানবিক করতে হলে আমাদের কী কী করতে হবে? রাজনীতিবিদের জন্য মানবিকতার পাঠ অত্যন্ত জরুরি, কারণ তারাই দেশের হর্তাকর্তা, বিধাতা হন। দেশ এবং সমাজ সাধারণত তাদের কাছেই জিম্মি থাকে। তারা সংকটে দেশের উদ্ধারে আবির্ভূত হন। তাদের মধ্যে মানবতা সৃষ্টি করতে হলে প্রথমে যে কাজ করতে হবে তা হলো অতীতের মানবিক নেতাদের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া। যেমন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসাÑ যারা মানবিক মূল্যবোধ ও সহানুভূতির মূর্ত প্রতীক ছিলেন। তাদের কাজ এবং জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে একজন রাজনীতিবিদ মানবিকতার পাঠ শুরু করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, রাজনীতিতে দীক্ষা নেয়ার পূর্বে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। যেকোনও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের সহানুভূতি, সামাজিক দায়িত্ববোধের গুরুত্ব শেখানো হবে। 
তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদদের সমাজের দরিদ্র, অসহায় এবং অবহেলিত জনগণের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এতে তারা সরাসরি মানুষের কষ্ট ও সমাজের সমস্যাগুলো দেখতে পারবে এবং বুঝতে পারবে, যা তাদের মধ্যে মানবিকতার বোধ জাগ্রত করতে সহায়ক হবে। রাজনীতিবিদদের গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, যেমন বাকস্বাধীনতা, বহু মতবাদ এবং সহনশীলতার শিক্ষা দেয়ারও প্রয়োজন। তাদের বুঝাতে হবে যে ভিন্ন মত থাকা গণতন্ত্রের একটি স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভিন্ন মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য রাজনীতিবিদদের খোলা আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সেখানে তারা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন এবং অন্যের মতামত শোনার সুযোগ পাবেন। নেতিবাচক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে যুক্তিপূর্ণভাবে এবং সৌজন্যের সঙ্গে অন্যের মতামতের প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রশিক্ষণও দেয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে তারা ভিন্ন মতকে শত্রুতা হিসেবে না দেখে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে পারে।
রাজনীতিবিদদের বুঝানো উচিত যেসব আদর্শের সীমাবদ্ধতা থাকে এবং অন্য আদর্শকে সম্মান করে সেটি থেকে শেখা যায়। এই মানসিকতা তৈরি করতে তাদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক আলোচনা এবং আদর্শগত তুলনামূলক বিশ্লেষণের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান এবং বোঝাপড়া তৈরি করতে উৎসাহিত করা উচিত। বিভিন্ন আদর্শের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে বের করে সম্মিলিতভাবে কাজ করার উপায় শেখানো যেতে পারে। রাজনীতিবিদদের বুঝানো উচিত যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং বহুমুখী চিন্তাধারা সমাজকে সমৃদ্ধ করে। শতফুল ফুটতে দেয়ার মাধ্যমে সমাজে নান্দনিকতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে, যা একটি দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। রাজনীতিবিদদের তাদের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অটল থাকতে হবে, তবে তা অন্যদের প্রতি অসম্মান বা শত্রুতা সৃষ্টি করে নয়। তাদের বুঝানো উচিত যে শক্তিশালী আদর্শের নেতা হওয়া মানে অন্যের মতামতকে অসম্মান করা নয় বরং যুক্তিসঙ্গতভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করা।
রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক জীবনের সমঝোতা ও সহানুভূতির চর্চা করতে উৎসাহিত করা উচিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহযোগিতা এবং সংলাপের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধশালী ও সমন্বিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। মানবিকতা, সহনশীলতা ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রাজনীতিক জীবনের জন্য অপরিহার্য। এগুলো শেখানোর মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা শুধু সফল নেতা হবেন না, বরং তারা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং সুন্দর সমাজ গড়তেও সক্ষম হবেন। দেশ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য মানবিক হওয়া এবং মানবিকতার প্রয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিকতা কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কেই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে একটি সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে। মানবিকতার সমাজ মানুষের মধ্যে সংহতি ও একতা তৈরি করে। যখন মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং অন্যের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, তখন একটি শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠে। এই বন্ধনই সমাজকে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। মানবতা ন্যায়বিচার এবং সাম্য প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। একটি মানবিক সমাজে প্রতিটি মানুষের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করা হয় এবং কেউ অবহেলিত বা বঞ্চিত হয় না।
এতে সমাজের অসাম্য বিভাজন কমে যায় এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানবিক আচরণ মানুষকে একে অপরের প্রতি আস্থা এবং সহযোগিতা তৈরি করতে উৎসাহিত করে। যখন মানুষ বুঝতে পারে যে তারা একে অপরের সাহায্য পাবে, তখন সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। এই সহযোগিতা সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। মানবিকতা সহনশীলতা, সংঘাত এবং অস্থিরতা প্রতিরোধে সহায়ক। যখন মানুষ মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে এবং একে অপরের প্রতি সহনশীল থাকে, তখন সমাজে শান্তি বজায় থাকে এবং অপরাধের হার কমে। এর ফলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়। মানবিকতা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। 
মানবিক সমাজের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চয়তা দেয়া হয়, যা একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে। মানবিকতা মানবাধিকার রক্ষার মূল ভিত্তি। যখন একটি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা মানবিক মূল্যবোধ অনুসরণ করেন, তখন সেই রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ন্যায়বিচার ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। মানবতা একটি সমাজের সংস্কৃতির মূল্যবোধ বিকাশে সহায়ক। মানবিক মূল্যবোধ সমাজে পারস্পরিক সম্মান, সহনশীলতা এবং সহযোগিতার মতো গুণাবলি প্রচার করে, যা সমাজের সাংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে। মানবিক আচরণ দুর্যোগ ও সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ। মানবতার ভিত্তিতে মানুষ একে অপরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং পুনর্গঠনে সহায়ক হয়।
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও তা সমাজের প্রতি আস্থা ও সংহতি বৃদ্ধি করে। বিশ্বব্যাপী মানবিক মূল্যবোধের প্রসার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সহযোগিতা ও শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হয়। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংঘাত কমাতে এবং বিশ্ব শান্তির জন্য একটি ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মানবিকতা একটি দেশ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও শান্তির জন্য অপরিহার্য। এটি কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ককে শক্তিশালী করে না, বরং বৃহত্তর সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় স্তরে স্থায়ী উন্নয়ন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয়। মানবিক মূল্যবোধের চর্চা একটি সুখী, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ শব্দপাঠ’র সম্পাদক
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন