• শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ন

ভেঙে পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের অস্বাভাবিক রাজনৈতিক জুটি : শুরু বাকযুদ্ধ

প্রভাত রিপোর্ট / ৩ বার
আপডেট : শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫

প্রভাত ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের অস্বাভাবিক রাজনৈতিক জুটি ভেঙে পড়েছে। তাদের সম্পর্কের নাটকীয় অবসানে এখন ঘোলাটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নিয়ে মাস্কের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং সতর্ক করে দেন যে মাস্কের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা সরকারি চুক্তিগুলো বাতিল করা হতে পারে।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, তিনি মাস্কের ওপর ‘খুবই হতাশ’। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উভয়পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে তীব্র কটাক্ষ ছুড়তে থাকেন। মাস্ক দাবি করেন, কুখ্যাত অর্থলোলুপ ও যৌন অপরাধী জেফরি অ্যাপস্টেইনের গোপন নথিতে ট্রাম্পের নাম রয়েছে—যদিও তিনি কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
বাকযুদ্ধের এই বিস্তার ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মাস্কের মালিকানাধীন টেসলার শেয়ারের দর এক দিনে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে গেছে, এবং তিনি ঘোষণা করেছেন, তার প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশযান কর্মসূচি থেকে সরে আসবে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতার এই সম্পর্ক যে দীর্ঘস্থায়ী হবে না—এমন জল্পনা বহুদিন ধরেই চলছিল। তবে মাত্র চার মাসেই সম্পর্কের এই আকস্মিক ও বিস্ফোরক ভাঙন ওয়াশিংটনের রাজনীতিকদের অনেককেই বিস্মিত করেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ইলনের ওপর খুব হতাশ। আমি তাকে অনেক সহায়তা করেছি। আমাদের সম্পর্ক দারুণ ছিল। জানি না, এখন সেটা থাকবে কি না।’ তিনি আরও জানান, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই হোয়াইট হাউসে ‘সরকারি ব্যয় দক্ষতা দপ্তর’ (ডগে) থেকে বিদায় জানাতে মাস্কের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। পরে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি (মাস্ক) পাগল হয়ে গেছেন।’ ট্রাম্পের ভাষ্য, মাস্ককে তিনিই সরে যেতে বলেছিলেন, কারণ ‘তার উপস্থিতি বিরক্তিকর হয়ে উঠছিল।’
মাস্ক তৎক্ষণাৎ তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লেখেন, ট্রাম্প তার সহায়তা ছাড়া ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিততে পারতেন না এবং ট্রাম্প ‘অকৃতজ্ঞ’। মাস্ক আরও লেখেন, ‘ট্রাম্পের নাম অ্যাপস্টেইনের নথিতে রয়েছে।’ ২০১৯ সালে জেলে আত্মহত্যা করেন অ্যাপস্টেইন, যাকে ঘিরে বহু ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচলিত।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, মাস্কের টুইট হতাশাজনক। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’-এ মাস্কের পছন্দের নীতিগুলো বাদ পড়েছে বলেই তিনি ক্ষুব্ধ।
ট্রাম্পের কর ও ব্যয় পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে সতর্ক মন্তব্য করলেও সম্প্রতি সেটিকে ‘একটি বিভীষিকা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মাস্ক। তার ভাষায়, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেবে এবং বিশ্ববাণিজ্য শুল্কের কারণে দেশটিতে মন্দা দেখা দিতে পারে। ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমাদের বাজেট বাঁচানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো—ইলনের প্রাপ্ত সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তিগুলো বাতিল করে দেয়া।’
জবাবে মাস্ক জানান, স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান ধ্বংস করে দেওয়া শুরু করবেন তিনি। উল্লেখ্য, নাসার মহাকাশচারীরা এই যান ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাতায়াত করেন। এই ঘোষণার পরপরই টেসলা কোম্পানির বাজারমূল্য থেকে বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হয়।
ট্রাম্পের প্রশাসনে মাস্ক ছিলেন ‘সরকারি ব্যয় দক্ষতা দপ্তর’-এর (ডগে) প্রধান। প্রথমদিকে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল—মাস্ক হোয়াইট হাউসে রাত কাটাতেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ ভ্রমণ করতেন।
তবে মাত্র চার মাসেই, ৫৩ বছর বয়সী মাস্ক পদত্যাগ করেন। প্রশাসনের ধীরগতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
এই টানাপোড়েনের মধ্যে মাস্ক ‘এক্স’-এ একটি জরিপ চালিয়েছেন, যার শিরোনাম ছিল: ‘আমি কি একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করব?’ এটি এক ধরনের রাজনৈতিক হুমকি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ মাস্ক ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেসব রিপাবলিকান তার সঙ্গে একমত নন, তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে তিনি তার বিপুল অর্থব্যয় করতে প্রস্তুত। এদিকে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ স্টিভ ব্যানন নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ‘মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা উচিত।’ এখন ওয়াশিংটনের রাজনীতিকরা উৎকণ্ঠার সঙ্গে তাকিয়ে আছেন—এই দ্বন্দ্ব আরও কত দূর গড়াবে তা দেখতে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও