• মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ইরান থেকে আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, সাইরেন বাজছে: ইসরায়েল বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সুযোগ তৈরি করে আইন সংশোধনে ফলকার টুর্কের উদ্বেগ তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ইরানের এক তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি ইসরায়েলের গুম সনদে স্বাক্ষর করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে: জাতিসংঘ নগরভবনে সভা করেছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে মাননীয় মেয়র বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ এখনো অর্থনৈতিক চাপ সামলে উঠতে পারেনি কিছু ব্যাংক ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়: ভন ডার লিয়েন
খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা

এখনো অর্থনৈতিক চাপ সামলে উঠতে পারেনি কিছু ব্যাংক

প্রভাত রিপোর্ট / ৪ বার
আপডেট : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মোট ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর চরম তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো। এখনো সেই চাপ সামলে উঠতে পারেনি কিছু ব্যাংক। এসব দুর্বলতার মধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করতে কাজ চলছে প্রথম ধাপে। এদিকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আবারও নতুন এক বিপজ্জনক রেকর্ডে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাত্র তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই ঋণের হার এখন দাঁড়িয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪.১৩ শতাংশে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় বিপজ্জনকভাবে বেশি। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত দিন লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। সর্বশেষ তা দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে, যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম উচ্চহার। এতে উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, ফলে বিনিয়োগে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। কারণ ব্যাংকঋণ নিতে গেলে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত নীতি সুদহার ১০ শতাংশে রাখা হবে। মূল্যস্ফীতি কমলে নীতি সুদহার কমানো হবে। গভর্নর বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই যে সুদহার কমিয়ে দেব, তা হবে না। আগে মূল্যস্ফীতি কমবে, তারপর পলিসি রেট ধীরে ধীরে কমানো হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৫০ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪০ শতাংশ কম। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ২১ হাজার ৮২২ কোটি, যা মার্চ মাসে ছিল ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। মার্চে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৫৭ শতাংশ, যা জুলাই-আগস্টের পটপরিবর্তনের পর টানা আট মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতায় ছেদ টেনেছিল। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৮২ শতাংশ। তার আগের মাস জানুয়ারিতে এই খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.১৫ শতাংশ।
পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের আমলে ব্যর্থ হওয়া পদ্ধতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে আলোচিত ও বিতর্কিত এক ইস্যু ‘মার্জার’ বা একীভূতকরণ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের শেষ ভাগ থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদিও এর লক্ষ্য ব্যাংক খাতকে আরো সুশৃঙ্খল ও স্থিতিশীল করা; তবে বাস্তবে এই সিদ্ধান্ত গ্রাহক, কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছে। কারণ ইতিহাস বলছে, একাধিক প্রতিষ্ঠান মার্জ হলে কিছু না কিছু কর্মকর্তার চাকরি হারানো নিশ্চিত।
ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানিসংকটে নাজুক দেশের আর্থিক ভিত্তি। বলতে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নানা সূচকে নেমে এসেছে উদ্বেগের ছায়া, বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। চলমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নীতিগত দুর্বলতা যোগ হয়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতির মন্দা কোনোভাবেই কাটছে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। দারিদ্র্য বিমোচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক কালে দেশের বেসরকারি খাতের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ব্যাংকঋণই ব্যবসায়ীদের প্রধান ভরসা। কিন্তু সেখানে সুদহার বেশি। বিকল্প অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের অবস্থাও ভালো না।’
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক নির্বাহীরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হলো বেসরকারি খাত। শিল্পের উৎপাদন, বিপণন কিংবা সেবা খাতের বেশির ভাগই বেসরকারি খাত নির্ভর। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে খাতটিকে ঋণবঞ্চিত করা হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
এদিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলার সংকট ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে কমেছে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই)। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৯১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ কোটি ডলার কম। কারণ গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২৮ কোটি ডলার, হিসাব অনুযায়ী যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৮.৯০ শতাংশ কম।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও