মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে : বাংলা নাটকের শিকড়সন্ধানী নাট্যকার সেলিম আল দীন। নাটক রচনায় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের রচনারীতি ও পরিবেশনা শৈলীর নতুন রূপ নির্মাণের মাধ্যমে নাটক লিখেছেন তিনি। ১৯৪৯ সালে ফেনীর সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করা বাংলানাট্যের বরপুত্র নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জন্ম জয়ন্তী উদযাপিত হলো কানাডার টরন্টোতে।
কানাডিয়ান বাংলা থিয়েটার এ্যলায়েন্সের উদ্যোগে টরন্টো'র টিএফএফ (টরন্টো ফিল্ম ফোরাম) এর ৩০০০, ড্যানফোর্থ এভেন্যু মিলনায়তনে ২২ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেল ৫টায় উদযাপিত হয় বাংলা নাট্যের বরপুত্র নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন এর ৭৫ তম জন্ম জয়ন্তী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টো এর প্রধান মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ দুলাল।
সুচনা বক্তব্যে নাট্যজন সেলিম চৌধুরী নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন এর সংক্ষিপ্ত বর্ণাঢ্য জীবনী উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন নাট্যদলের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন থিয়েটার ফোকস এর নয়ন হাফিজ, কবি ও নাট্যকার মেহরাব রহমান, নাট্যজন মাহমুদুল ইসলাম সেলিম, আইএম ক্রিয়েটিভ ল্যাব এর মিথুন রেজা, ম্যাক থিয়েটার এর ম্যাক আজাদ, টরেন্টো ফিল্ম ফোরামের পক্ষে আরিফ মোর্শেদ । বাংলাদেশ থিয়েটারের সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ দুলাল সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন। সেলিম আল দীন এর নাটক "যৈবতী কন্যার মন" থেকে পাঠ করেন উনার ছাত্রী সেতু। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন আরিয়ান হক। এরপর সেলিম আল দীনের নাটক ও কর্মজীবনের উপর নির্মিত তথ্য চিত্র পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। তথ্য চিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন নাট্যসঙ্ঘ কানাডার সুব্রত পুরু।
একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করলেও পরে বাকি জীবন শিক্ষকতাই করেছেন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং আমৃত্যু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় মারা যান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
সেলিম আল দীন আধুনিক নাটকের যে চর্চা, আধুনিক নাটকের যে রচয়িতা, তাঁদের মধ্যে উনি বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার। তাঁর নিজস্ব গতিতে, নিজস্ব ধারায় উনি নাটক রচনা করেছেন। প্রথম দিকে সেলিম আল দীন যে নাটকগুলো রচনা করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে পাশ্চাত্যের কিছু ধাঁচ ছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি একের পর এক যেসব নাটক রচনা করেছেন, তাতে তিনি আমাদের নিজস্ব যে ঐতিহ্য, নিজস্ব যে মঞ্চ, আমাদের যে পরিবেশনা—সেটার ওপর ভিত্তি করে নাটকগুলো রচনা করেছেন। বাংলা নাটক যত দিন বেঁচে থাকবে, বাংলা ভাষা যত দিন বেঁচে থাকবে, সেলিম আল দীন তত দিন বেঁচে থাকবেন। মঞ্চ নিয়ে উনার অনেক ভাবনাচিন্তা ছিল। গ্রামে মঞ্চটা কেমন হতে পারে, গ্রাম থিয়েটার নিয়ে তাঁর অনেক পরিকল্পনা ছিল এবং নাট্য গবেষণার ধারাগুলোও পাল্টে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি।
পথরেখাআসো/দেশকণ্ঠ/আসো