শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান : প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা তামিল হোক

প্রকাশিত - ০১ জুলাই, ২০২৪   ১১:১১ পিএম
webnews24
অনলাইন ডেস্ক

দৈনিক প্রভাতসহ দেশের বিভিণœ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের দুর্নীতি প্রকটভাবে প্রকাশের পর তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিতর্ক। ক্ষমতাসীনেরাও এখন স্বীকার করছেন যে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তবে জাতীয় সংসদে বক্তব্যে সরকারি দলের সদস্যদের অনেকে পুলিশ ও প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই সীমাহীন দুর্নীতি করার মতো পরিবেশ তৈরি হওয়ার দায় তাহলে কার? দায় আসলে সরকারের ওপরই বর্তায়। কারণ, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকার কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এবং তা মানুষকে বিচলিত করছে। ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে রাজি না হলেও আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে এটা স্বীকার করেন যে সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলা হলেও তা কার্যকর হয়নি। গত ২৫ জুন সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু মানুষ লোভী হয়ে যায়। টাকাপয়সা এত বেড়ে যায় যে বিদেশে রাখতে গিয়ে তারপর দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেলল যে দেশেই থাকা যায় না। তাহলে লাভ হলো কী! এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। নেশার মতো হয়ে যায়। 
গত কয়েক দিনে জাতীয় সংসদেও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য দুর্নীতির অভিযোগের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তাঁরা সমালোচনা করেছেন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের। তাদের কেউ কেউ এ-ও বলেছেন, কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে দোষ হচ্ছে রাজনীতিকদের। এই সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, কতিপয় বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীর যোগসাজশের পাশাপাশি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। বহু পক্ষের যোগসাজশেই উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতি হয়। এখন এরই চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে উচ্চপদস্থ কারও কারও দুর্নীতির খবরে।
প্রতিনিয়তই এমন দুর্নীতি, অপব্যয় ও অনিয়মের ব্যাপারটি ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে, হচ্ছে আলোচিতও। সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের দুর্নীতির মাধ্যমে সীমাহীন সম্পদ গড়ার খবর জনমনে মিশ্র ধারণারও জন্ম দিয়েছে। অবশ্য যাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দুর্নীতির এ তো আংশিক চিত্র মাত্র! এমন অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ সমাজের বিভিন্ন স্তরে অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদশালী হচ্ছেন। তাদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে? বস্তুত শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই নয়, বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রতারণা করা, ভেজাল মেশানো, সিন্ডিকেট গড়ে তোলা ইত্যাদির নজির আমরা দেখছি। আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দুর্নীতির ছাপ লক্ষণীয়। সম্প্রতি দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। যারাই দুর্নীতি করবে, সে যেই হোক, তাদের ধরা হবে।
উল্লেখ্য, যে কোনো দেশের জন্যই দুর্নীতি শুধু সামাজিক শৃঙ্খলাই বিনষ্ট করে না, প্রকট শ্রেণিবৈষম্যেরও জন্ম দেয়। সুশাসনের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করে। পরিতাপের বিষয়, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও সুযোগসন্ধানীরা আইন ও নিয়মের ফাঁকফোকর গলে তাদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যায়। যারা রাষ্ট্রের কর্মী, তাদের কারও কারও মধ্যে সম্পদের হিসাব না দেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার সময় নিয়োগপ্রাপ্তের তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক। এরপর ৫ বছর পরপর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হয়। শুদ্ধাচার চর্চা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য নিয়মটি জরুরি হলেও এ বিষয়টিতে কেউ আর গুরুত্ব দিতে চান না। ব্যবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদদের কারও কারও মধ্যেও আয়করের বিবরণী জমা দেয়ার ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
ভুলে গেলে চলবে না, দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই এর লাগাম কঠোর হাতে টেনে ধরা বাঞ্ছনীয়। দুর্নীতি রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গেও এর একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও প্রমাণসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটের বিষয়টিও গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তবে কোনো ভুল পদক্ষেপে নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া দরকার। বস্তুত দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা সবার।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন