বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি

প্রকাশিত - ১৬ আগস্ট, ২০২৪   ০৯:২৩ পিএম
webnews24

অধ্যাপক ড. আবদুর রহমান এফসিএ : প্রত্যেকটি দেশের অর্থনীতির হৃৎপি- হিসেবে পরিচিত হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক খাত। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। অথচ গত ১৫ বছরের আওয়ামী সরকারের শাসনামলে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাত নাজুক হয়ে পড়ে। ঋণের নামে অর্থ লোপাটের কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকের ভিত একেবারেই দুর্বল হয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। ৩দিন কার্যত দেশ সরকারবিহীন থাকার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। সরকার পতনের পর থেকেই দেশজুড়ে নৈরাজ্য তৈরি হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পদত্যাগ করতে শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকশূন্য হয়ে যাওয়ার কারণেই ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বর্তমানে যে সরকার গঠন হয়েছে তার কাজ হবে ব্যাংক খাতকে টেনে তোলা। খাতটিতে যে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে, সেটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। গ্রাহকরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের আমানতের টাকা তুলে নিতে শুরু করলে দেশের অনেক ব্যাংকই দেউলিয়া হয়ে যাবে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি নতুন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হবে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো।
অনিয়ম-দুর্নীতি আর জনগণের অর্থ লোপাটের অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় কিংবা যে ভাষায় এখন প্রতিবাদ করা হচ্ছে, সেটি ঠিক নয়। শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। নতুন গভর্নর নিয়োগের পর এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আশা করি, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অচলাবস্থা দূর করে দ্রুত ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনবেন। সরকার পতনের পর থেকেই বিশৃঙ্খলা চলছে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। সেখানে যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা মোটেও কাম্য নয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করলে তাদের দেশের প্রচলিত আইনের মুখোমুখি করা দরকার। কিন্তু এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ব্যাংকগুলোয় অস্থিরতা তৈরি করেছে, তা ঠিক নয়। বিশৃঙ্খলার কারণে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই ধসে পড়তে পারে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনসহ সংস্কার দরকার। এছাড়া বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সেসব অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। 
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রতিবেদন ২০২৩-এর তথ্যানুসারে, দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান দশম, যা গতবার ছিল দ্বাদশ। এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্নীতি এবার সবচেয়ে বেশি। টিআইয়ের প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট যে দেশে আর্থিক খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে বেড়েছে কালো টাকার প্রবাহ। শতকরা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয় আওয়ামী সরকার। যদিও সরকারের এ ভূমিকাকে অনেকেই কড়া সমালোচনা করেছে। তার পরও এ সুযোগ অব্যাহত রাখে। কালো টাকার প্রবাহ বাড়ায় নগদ অর্থের চাহিদাও বেড়ে যায়। কারণ সরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীরা নগদ টাকায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কেননা নগদ টাকায় লেনদেনে কোনো প্রমাণ থাকে না। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক খাতের বাইরে চলে যাওয়ায় তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংক খাত।
অন্যদিকে ব্যাংক খাতে বিরাজমান অস্থিরতাÑ ঋণখেলাপি, তারল্য সংকট, ব্যাংক একীভূতকরণ প্রভৃতি কারণে এ খাতের প্রতি আমানতকারীসহ সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকা রাখার চাহিদা বেড়েছে। উপরন্তু ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতিও নগদ অর্থের চাহিদা বাড়ার একটি কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। সে সময় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। তবে এটাই খেলাপি ঋণের পুরো চিত্র নয়। লুকানো খেলাপি ঋণ বরং এর চেয়ে অনেক বেশি। অবলোপন, আদালতের স্থগিতাদেশ, বিশেষ নির্দেশিত হিসাবে থাকা অর্থ ধরলে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ হবে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকার মধ্যে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২ বছর ধরে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে। যদিও অর্থনীতিবিদদের দাবি, দেশের প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার বিবিএসের তথ্যের চেয়েও অনেক বেশি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ভোগ ব্যয় বেড়েছে এবং সঞ্চয় করার প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। আবার বাড়তি ব্যয় মেটাতে সঞ্চয়ের ওপর চাপ বেড়েছে, ব্যাংক থেকে আমানত তুলে ফেলছে মানুষ। যে দেশের অর্থনীতি যত বেশি সুসংহত, সে দেশে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ব্যাংকের সংখ্যা তত কম। এক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পাই যে তাদের অর্থনীতির আকার বেড়েছে। একই সঙ্গে অর্জন করেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। অর্থনীতির আকার বিবেচনায় সেসব দেশে স্থানীয় ব্যাংকের সংখ্যা বাড়েনি। এসব দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় সেখানে বিদেশী ব্যাংকগুলোর আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। থাইল্যান্ডের জিডিপির আকার ছাড়িয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে সরকারি খাতে মাত্র ৬টি এবং বেসরকারি খাতে মাত্র ১২টি ব্যাংক। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দেশটিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিজস্ব ব্যাংকের সংখ্যা ১৮। 
এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ সিঙ্গাপুরে স্থানীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৫টি। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ায় স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি। অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় প্রতিনিয়ত দেশগুলোয় বিদেশী ব্যাংকগুলো শাখা খুলছে। থাইল্যান্ডে ৪৫টি, সিঙ্গাপুরে ২২টি ও মালয়েশিয়ায় ২৬টি বিদেশী ব্যাংক। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আমাদের চেয়ে ব্যাংকের সংখ্যা কম। দেশটিতে ১২টি সরকারি ও ২২টি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। তবে ভারতে অঞ্চলভিত্তিক ৪৩টি ব্যাংকের পাশাপাশি ৪৬টি বিদেশী ব্যাংকও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফিলিপাইনের সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৭টি ব্যাংক। তবে ফিলিপাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২৯টি বিদেশী ব্যাংক। কিন্তু এসব দেশের তুলনায় ব্যাংক খাতে বাংলাদেশের চিত্র পুরো উল্টো। বর্তমানে দেশে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬২। এর মধ্যে বিদেশী ব্যাংক ৯টি। ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংকসহ দেশে মোট ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে। একটি ডিজিটাল কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাকি ৪৩টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে। 
দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী বিবেচনায় প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। এ সময়ে পরিচালনা পর্ষদসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আনা হয় সংশোধন। শীর্ষ পর্যায়ের পদগুলোয় নিয়োগ দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে ব্যাংক খাতে বেড়েছে অস্থিতিশীলতা। বেড়েছে অনাদায়ী ঋণ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ফলে দেশের প্রায় সব ব্যাংকেরই মূলধন কাঠামো দুর্বল হতে থাকে। দেশের ব্যাংক খাতের নাজুক পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনো বিদেশী ব্যাংকও দেশে আসেনি। আশির দশকে যেসব বিদেশী ব্যাংক দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করত, তারাও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে।  
দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আওয়ামী সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতা ও নিয়মনীতি কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোয় সংস্কার করা দরকার। যারা ব্যাংক খাতের অনিয়মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রভাবশালীদের প্রভাব কমিয়ে এনে পেশাদারত্ব ফিরিয়ে আনা জরুরি। নিয়মনীতি না মেনে রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। খেলাপি ঋণ উদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে জোর তৎপরতা চালাতে হবে। আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক খাতে দ্রুত স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হবে।
ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে
বলাই বাহুল্য যে, দলীয় প্রভাবের কারণে কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রম এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তো সরাসরি আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে বলেও সংশ্লিষ্টদের অনেকের অভিযোগ। সম্প্রতি গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর সেসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আমলে দখল হওয়া ৩টি ব্যাংকে গত কয়েকদিন ধরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খবরে প্রকাশ, সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দাবিতে ব্যাংকগুলোয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেসব ব্যাংকের লেনদেনও। আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় তাই ব্যাংকগুলোয় দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরাতে রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা এক সার্কুলার এবং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এদিকে সরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কর্মীরা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যে কোনো সময় এই ক্ষোভ প্রকাশ্য রূপ নিতে পারেÑ এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি হয়ে পড়েছে। পর্যায়ক্রমে দখলে থাকা ব্যাংকগুলো নিয়মের মধ্য দিয়ে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত ব্যাংক খাতের ধস ঠেকানো ও শৃঙ্খলা ফেরানো প্রয়োজন। কারণ ব্যাংক খাতসহ অর্থনৈতিক পরিবেশ যথাসম্ভব দ্রুত স্বাভাবিক করতে না পারলে সংকট আরও বাড়তে পারে, বিনিয়োগ কমতে পারে; ফলে থমকে যেতে পারে অর্থনীতি। বলা বাহুল্য, গেল সরকারের সময়েই ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করতে আমরা দেখেছি। এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিশৃঙ্খলা রোধে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, ডলারের দামের অস্থিতিশীলতা, রিজার্ভের ঘাটতি, দেশি-বিদেশি পর্যায়ে ঋণের দায় বৃদ্ধি, প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ হ্রাস; সর্বোপরি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের নামে অর্থ লুট হওয়ায় এ খাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গতকাল জানিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ বা জিডিপির ২ শতাংশের সমান।  
ব্যাংক খাতে দুষ্ট চক্র ভেঙে ফেলতে এবং স্বচ্ছতা আনতে তাই একটি সুনির্দিষ্ট, সময় উপযোগী, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। স্বচ্ছতার স্বার্থে এই খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরাও দরকার। অবশ্য নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সবার মাঝেই প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে। ইতোমধ্যে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার জন্য অর্থনীতির এসব পরিচিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে নিশ্চয়ই। দেশের ব্যাংকগুলোয় শৃঙ্খলা ফেরানো তো বটেই, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি আর্থিক খাতের সংস্কারে সফল হবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। দেশের অর্থনীতির গতি বেগবান করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

লেখক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন