• রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

পরিবারের সঙ্গে না থাকার যন্ত্রণাটা ঈদের দিন একটু বেশি অনুভব করেন কারাবন্দিরা

প্রভাত রিপোর্ট / ৪ বার
আপডেট : শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
ছবি সংগৃহীত

প্রভাত রিপোর্ট : দেশের ৭১টি কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৭৩ হাজারের বেশি কারাবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ৭১ হাজারের বেশি, আর নারী বন্দি আড়াই হাজারের মতো। এদের মধ্যে ১৫৩ জন ভিআইপি বন্দিও রয়েছেন, যারা আদালতের নির্দেশে কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পান। তবে ঈদের দিনে কারা অধিদফতর চায়— প্রত্যেক বন্দিই অন্তত কিছুটা আনন্দ অনুভব করুক, ফিরে পাক স্বাভাবিক জীবনের উপলব্ধি। ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর প্রিয়জনের সঙ্গে এক বিশুদ্ধ অনুভূতির ভাগাভাগি। তবে যাদের জীবনের বাস্তবতা চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাদের কাছে ঈদের মানে কী? পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, নিঃসঙ্গতা, আর অনিশ্চয়তার ভেতর যাপিত জীবনের মাঝেও ঈদ কি তাদের আনন্দ বয়ে আনে?
পরিবারের সঙ্গে না থাকার যন্ত্রণাটা এদিন যেন একটু বেশি করে অনুভব করেন কারাবন্দিরা। বিশেষ করে সেই বন্দিরা, যাদের কোনও স্বজন আসেন না দেখা করতে। তবে কারা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ, উন্নত খাবার এবং বন্ধুসুলভ পরিবেশ— তাদের অনেকটাই মানসিকভাবে চাঙা করে তোলে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা ভাষায় সেখানকার এক বন্দির বক্তব্য— ‘আমার জন্য কেউ আসে না, তবে এই একদিনের একটু ভালো খাবার আর বন্ধুরা মিলে গল্প করলে আনন্দ লাগে। মনে হয় মানুষ এখনও মানুষ থাকতে পারে।’
ঈদ শুধু উৎসব নয়— এটি প্রত্যাবর্তনেরও এক আহ্বান। যারা ভুল করেছে, তারা যেন শোধরানোর সুযোগ পায়, পরিবারে ফিরতে পারে, সমাজে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে— এই ভাবনাই বারবার উঠে আসে কারা কর্তৃপক্ষের মুখে। কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের আটটি বিভাগে ১৫টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং বিভিন্ন জেলায় আরও ৫৬টি কারাগার রয়েছে। মোট ৭১টি কারাগারে প্রায় ৭৩ হাজার কারাবন্দি রয়েছে। ঢাকা বিভাগে পাঁচটি কেন্দ্রীয়সহ ১৮টি কারাগারে ২৫ হাজার ৩৭৩ জন বন্দি রয়েছেন, যা মোট বন্দির প্রায় ৩৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বন্দি রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে ১১টি কারাগারে বন্দি আছেন ১৪ হাজার ৫০৯ জন। রাজশাহী বিভাগে ৮টি কারাগারে রয়েছেন ৯ হাজার ৪২০ জন কারাবন্দি। ময়মনসিংহে চারটি কারাগারে কারাবন্দি রয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৭ জন। বরিশালে ছয়টি কারাগারে ২ হাজার ৮৫৬ জন। খুলনা বিভাগে ১১টা কারাগারে ৬ হাজার ৫৬৬ জন। সিলেট বিভাগে ৭টি কারাগারে ৪ হাজার ৫৭৭ জন এবং রংপুর বিভাগে ৮টি কারাগারে কারাবন্দি রয়েছেন ৪ হাজার ৯০৮ জন।
কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিটি কারাগারে আমরা চেষ্টা করি ঈদের দিনে বন্দিদের জন্য একটু ভিন্ন কিছু করার। ঈদের দিনে বিশেষ খাবার যেমন- পোলাও, মাংস, সেমাই, ডিমসহ উন্নতমানের খাবারের আয়োজন থাকে। পাশাপাশি বন্দিদের পরিবার পক্ষ থেকে বাসার খাবার পাঠালে সেটাও বন্দিদের দেয়া হয়।’
তিনি আরও জানান, সাধারণত বন্দিরা ১০ দিনে একবার ৫ মিনিট করে পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পান। তবে ঈদ উপলক্ষে আরও ৫ মিনিট বেশি কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা ঈদের দিনে এলে তাদের জন্য দেখা করার সুযোগ সহজ করে দেয়া হয়।’
কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বাংলা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চাই, বন্দিরা ঈদের দিনটিকে ভিন্নভাবে উপভোগ করুক। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিটি কারাগারে ঈদের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বন্দিরাই নিজেদের মধ্যে গান, কবিতা, নাটক পরিবেশন করেন। এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভালো প্রভাব পড়ে।’
ভিআইপি বন্দিদের জন্য ঈদে আলাদা কোনও বাড়তি সুবিধা না থাকলেও তাদের নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারকে ইতিমধ্যে বিশেষ কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ভিআইপি বন্দিদের রাখা হবে। তবে এখনও হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে ঈদের আগে ভিআইপি বন্দিদের জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কারাগারে ঈদের দিন যেন বন্দিরা একটু আনন্দ অনুভব করতে পারে, সে চেষ্টাই আমাদের। ভিন্ন কিছু দিয়ে হলেও আমরা চাই, তারা যেন উপলব্ধি করতে পারেন—সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ সবার জন্য আছে।’
দেয়ালের ভেতর থেকে বাইরে ফিরে এসে কেউ যদি নতুন জীবন শুরু করতে পারেন, তাহলেই হয়তো ঈদের প্রকৃত আনন্দ পরিপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও